চাঁপাই নবাবগঞ্জের আম কেন বিখ্যাত এবং ফরমালিন, কার্বাইড যুক্ত আম কীভাবে চিনবেন - ২৪৭হাট ব্লগ
এই ব্লগের প্রদত্ত ছবিতে ফরমালিন ও কার্বাইড যুক্ত আমের গুনাগুন বলতে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আমকে সতেজ ও আকর্ষনীয় করতে এসব কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে। এগুলো আসলে মানব স্বাস্থের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। চলুন জেনে নিই ফরমালিন ও কার্বাইড কি, আমে কিভাবে এগুলো ব্যবহার করে এবং এর ক্ষতিকারক দিকগুলো কি কি?
নিচে দেখুন - চাঁপাই নবাবগঞ্জের আম কেন বিখ্যাত?
ফরমালিন কি?
ফরমালডিহাইড বা মিথান্যাল (ইংরেজি: Formaldehyde, Methanal) এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ। বর্ণহীন ও দূর্গন্ধযুক্ত গ্যাস হিসেবে এর সবিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এটি আগুনে জ্বলে এবং বিষাক্ত পদার্থবিশেষ। এর রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে CH2O। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ফরমালডিহাইড পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় সচরাচর এটি ফরমালিন নামে পরিচিত হয়ে থাকে।
প্রকৃতিতে ফরমালিন কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের সংমিশ্রণে তৈরী হয়। ১৮৫৯ সালে রুশ রসায়নবিদ আলেকজান্দর বুতলারভ ফরমালিনের অস্তিত্ব তাঁর প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে ১৮৬৯ সালে অগাস্ট উইলহেম ভন হফমেন স্বার্থকভাবে চিহ্নিত করেন। (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যেভাবে আমে ব্যবহার করে :
ফরমালিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংক্রমিত হতে না দেয়া। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলতে পারে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফরমালিন তরল বোতল বাজার থেকে কিনে এক ছিপি ফরমালিন এক লিটার পানিতে মিশিয়ে আমের উপর স্প্রে করে। আম পাকার সময় না হলেও বেশী মুনাফা লাভ করার আশায় কাঁচা আমকেই কার্বাইড নামক
রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানোর ব্যবস্থা করে, পরে ফরমালিন ও অন্যান্য
ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে এই আম বিক্রি করে বিভিন্ন বাজারে।
ফরমালিনের ক্ষতিকারক দিক :
১. ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
২. তাৎক্ষণিকভাবে ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কারবাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
৩. ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে। এতে মৃত্যু অনিবার্য।
৪. মানবদেহে ফরমালিন ফরমালডিহাইড ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তের এসিডিটি বাড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে।
৫. গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
কার্বাইড কি?
ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ক্যালসিয়াম অ্যাসিট্লাইড নামেও পরিচিত, এটি CaC2 এর রাসায়নিক সূত্রের সাথে একটি রাসায়নিক যৌগ।এটির প্রধান ব্যবহার এসিটিলিন এবং ক্যালসিয়াম সাইনামাাইড উৎপাদনের ক্ষেত্রে। বিশুদ্ধ উপাদানটি বর্ণহীন, তবে প্রযুক্তিগত গ্রেড ক্যালসিয়াম কার্বাইডের টুকরা ধূসর বা বাদামী হয় এবং এটি প্রায় 80-85% CaC2 (বাকিটি CaO (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), Ca3P2 (ক্যালসিয়াম ফসফাইড), CaS (ক্যালসিয়াম সালফাইড),Ca3N2 (ক্যালসিয়াম নাইট্রাইড), সিআইসি (সিলিকন কার্বাইড), ইত্যাদি)। (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)
আমে ব্যবহার বিধি :
কার্বাইড পাউডার বাজার থেকে কিনতে পাওয়া যায়। এই কার্বাইড ফলমূলে দিয়ে তা বাতাসের
সংস্পর্শে
রাখা হয়। আর বাতাসের সংস্পের্শে এলেই কার্বাইড হতে অ্যাসিটিলিন নামের গ্যাস
বেরোতে থাকে। যা উত্তাপ সৃষ্টি করে। আর এ উত্তাপের ফলেই আম পাকে।
কার্বাইডের ক্ষতিকারক দিক :
কার্বাইড শরীরের ওপর কী ধরনের ক্ষতি করে তা নিয়ে ২০০৫ সালে তুরস্কের মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইকরাইস ইউনিভার্সিটি একটি গবেষণা করে।
১. কার্বাইড আপনার মস্তিস্কে অক্সিজেনের সরবরাহে বাধা
প্রদান করে। যার ফলে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘুম ঘুম ভাব,
কনফিউশন বা অস্থিরতা, পারিপার্শিক অবস্থা সম্বন্ধে ভুলে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি
লোপ পাওয়া, খিঁচুনি এমনকি কোমা।
৩. পাকস্থলি সংন্ত্রান্ত নানান সমস্যা এমনকি ক্যান্সার।
৪. অন্ত:সত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে হতে পারে ভয়াবহ সমস্যা। যার ফলাফল হবে সন্তানের নানান অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্ম।
৫. এ ছাড়া হতে পারে আলসার, হাইপার এসিডিটি, জন্ডিস,
লিভার ফেইলুর এবং কিডনি ফেইলুর। এমনকি পারে হৃদরোগ, স্ট্রোকের সাথেও আপনার
দেখা হয়ে যেতে পারে।
ফরমালিন ও কার্বাইড যুক্ত আম কীভাবে চিনবেন -
১. প্রথমেই লক্ষ্য করুন যে আমের গায়ে মাছি বসছে কিনা। কেননা ফরমালিনযুক্ত আমে মাছি বসবে না।
২. আম গাছে থাকা অবস্থায়, বা গাছ পাকা আম হলে লক্ষ্য করে দেখবেন যে আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর।
৩. কার্বাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আম গুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। গাছ পাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই।
৪. গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোঁড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কারবাইড দেয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনো কখনো বেশি দেয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়।
৫. হিমসাগর ছাড়াও আরও নানান জাতের আম আছে যারা পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছপাকা হলে এইসব আমের ত্বকে দাগ পড়ে। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।
৬. আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে দেখুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে।
আমের রাজধানী চাঁপাই নবাবগঞ্জ :
বাংলাদেশের একেক জেলার আবহাওয়া একেক ফলের জন্য উপযুক্ত যেমন, দিনাজপুরের লিচু, পঞ্চগড়ের কমলা, জামালপুরের কাঁঠাল ইত্যাদি তেমনি আম চাষের উপযুক্ত আবহাওয়ার একটি উত্তরবঙ্গের আমের রাজধানী খ্যাত জেলা হচ্ছে চাঁপাই নবাবগঞ্জ। একটু জেনেনিই কেন আমের রাজধানী বলা হয়, গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস। বহু বছর আগে থেকে আম বাগান রয়েছে এই চঁপাইয়ে। এক সময় নবাবদের আমলে চম্পাবতী নামে একজন সুন্দরী বাঈজী বাস করতেন এই নবাবগঞ্জে, অনেকে তাঁকে চাঁপাদাসী বলে ডাকতেন, তাঁর নাম থেকেই চাঁপাই নামকরন হয়। তিনি একসময় চাঁপাই-নবাবগঞ্জ থেকে ভারতের কিছু অংশ পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে অনেক আম গাছ রোপন করেছিলেন যে গাছ গুলো এখনো দেখা যায়, গাছগুলো এত পুরনো হওয়া স্বত্তেও এখনো একিরকম মিষ্টি আম দিয়ে যায়। এখানে প্রায় সব প্রজাতির আম-ই মিস্টি। চাঁপাই-এর শিবগঞ্জ, কানসাট, ভোলাহাট এসব জায়গায় আম বেশি উৎপাদন হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হচ্ছে, ফজলি, ল্যাংড়া, খিরশাপাত, গোপালভোগ, আশ্বিনা অন্যতম। চাঁপাই-নবাবগঞ্জের খিরশাপাত আমটি ২৭/০১/২০১৯ইং তারিখে জিআই-০৩ ট্যাগ লাভ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-এর অন্যান্য জায়গা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের আমের স্বাদ একটু বেশি মিষ্টি। এখানে আনুমানিক ১৫০ বছর এর উর্ধের গাছের সংখ্যা ৩০%, ফজলি আমের গাছগুলো বেশি বয়সের দেখা যায়। চাঁপাইয়ের প্রতিটি বাড়ির আশেপাশে এমনকি কিছু কিছু বাড়ির আঙ্গিনাতেও আম গাছ দেখা যায়। সবমিলিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন ধরনের আমের গাছে ভরপুর থাকে।
কেমিক্যাল মুক্ত স্বুসাদু আম কোথায় থেকে কিনতে পাবেন :
অনলাইনে চাঁপাইয়ের আম লিখে সার্চ করলে অনেক বাগান মালিকের মেবাইল নাম্বার পাবেন এছাড়া এই ব্লগের দেয়া লিংকে ক্লিক করে (লিংক) আপনার মোবাইল নাম্বার দিন এবং বর্ণনা এর ঘরে আম লিখে সেন্ড করুন এরপর বাগান মালিক আপনাকে ফোন দিবেন অথবা ০১৭৮২ ৩৬৬ ১৭৭ এ নাম্বারে কল করে খোঁজ নিতে পারেন।